বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ১২:২০ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ
ফুলবাড়িয়ার বাবুলের বাজারে গ্রামবাসীর মানববন্ধন গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং সুশাসন নিশ্চিত করাই বিএনপির মূল লক্ষ্য: আলহাজ্ব ইদ্রিস মিয়া নেত্রকোনায় দেশ বরেন্য কথা সাহিত্যিক খালেকদাদ চৌধুরীর ৪০ তম প্রয়ান দিবস উপলক্ষে স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত পাকিস্তান-আফগান বাহিনীর মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ নতুন জনপ্রশাসন সচিব এহছানুল হক ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে বাস চলাচল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে মাদক সম্রাট কতৃক যুবদল নেতার ওপর ভয়াবহ হামলা, আতঙ্কে এলাকাবাসী! জমকালো আয়োজনে পটিয়ায় ‘Haya’ লেডিস কালেকশনের শুভ উদ্বোধন মদনে প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির কমিটি গঠন  মদনে সাংবাদিকদের সঙ্গে নিয়ে পূজা মন্ডপ পরিদর্শন করলেন ইউএনও

দুই ভাইয়ের এক স্ত্রী, কেন এমন প্রথা ভারতীয় এই নৃগোষ্ঠীর

অনলাইন ডেক্স
  • প্রকাশিতঃ শনিবার, ২৬ জুলাই, ২০২৫
  • ৪২ সময়

হিমাচল প্রদেশের সিরমৌর জেলার শিল্লাই গ্রামের ট্রান্স-গিরি অঞ্চলে প্রাচীন রীতিনীতির অনুসরণে অনুষ্ঠিত হয়েছে এক ব্যতিক্রমী বিবাহ অনুষ্ঠান—এক নারী বিয়ে করেছেন দুই ভাইকে। হাট্টি সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী পলিয়ান্ড্রি বিয়েতে শত শত অতিথি অংশ নেন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির তথ্যমতে, দুই বরের নাম প্রদীপ ও কপিল নেগি এবং কনের নাম সুনীতা চৌহান। তাঁরা জানান, সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে এবং পারিবারিক সম্মতিতে তাঁরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ১২ জুলাই থেকে টানা তিন দিন চলে বিবাহ উৎসব। অনুষ্ঠানে স্থানীয় লোকগান ও নৃত্যে উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয় বিয়ে। ব্যতিক্রমী এই বিয়ের নানা দৃশ্য এরই মধ্যে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল।

কনে সুনীতা বলেন, ‘আমি হাট্টি সম্প্রদায়ের এই ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতাম। কোনো ধরনের চাপের মুখে পড়ে নয়, স্বাধীনভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি। আমরা যে সম্পর্ক গড়ে তুলেছি, তার প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল।’

শিল্লাই গ্রামের বড় ভাই প্রদীপ একজন সরকারি কর্মচারী এবং ছোট ভাই কপিল বিদেশে কর্মরত। প্রদীপ বলেন, ‘আমরা প্রকাশ্যেই এই রীতিনীতি অনুসরণ করছি। কারণ, আমরা আমাদের ঐতিহ্য নিয়ে গর্বিত। এটা আমাদের দুই ভাইয়ের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত।’ কপিল বলেন, ‘আমি বিদেশে থাকলেও এই বিয়ের মাধ্যমে আমরা আমাদের স্ত্রীকে ভালোবাসা, স্থিতি ও সহায়তা দেওয়ার অঙ্গীকার করেছি।’

হিমাচল প্রদেশের রাজস্ব আইনে এই প্রথা বৈধ হিসেবে স্বীকৃত এবং স্থানীয়ভাবে এটি ‘জোড়িদারা’ নামে পরিচিত। ট্রান্স-গিরির বাদহানা গ্রামে গত ছয় বছরে অন্তত পাঁচটি এমন বিয়ে হয়েছে। হাট্টি সম্প্রদায় মূলত হিমাচল ও উত্তরাখন্ড সীমান্তবর্তী একটি ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক গোষ্ঠী। তিন বছর আগে তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে তফসিলি সম্প্রদায় হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। দীর্ঘ সময় ধরে এই অঞ্চলে পলিয়ান্ড্রি বিয়ে প্রচলিত ছিল। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শিক্ষার প্রসার ও আর্থিক উন্নতির ফলে এই প্রথা অনেকটাই বিলুপ্তির পথে। তবে অল্প হলেও এখনো কিছু গ্রামে এ ধরনের বিয়ে দেখা যায়।

হাট্টি সম্প্রদায়ের প্রায় ৩ লাখ মানুষ সিরমৌরের প্রায় ৪৫০টি গ্রামে বসবাস করে। ট্রান্স-গিরি অঞ্চলে এখনো কিছু গ্রামে এই প্রথা প্রচলিত রয়েছে। উত্তরাখন্ডের জৌনসর বাবর ও হিমাচলের কিন্নৌর জেলায়ও একসময় এই প্রথা ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পলিয়ান্ড্রি প্রথার অন্যতম কারণ ছিল ভূমির বিভাজন ঠেকানো। একটি পরিবারের কৃষিজমি ভাইদের মধ্যে ভাগ হয়ে না যাক, সেটাই ছিল মূল চিন্তা। এখনো এই গোষ্ঠীর নারীদের জমির ওপর অধিকার নিয়ে বিতর্ক আছে। কেন্দ্রীয় হাট্টি সমিতির সাধারণ সম্পাদক কুন্দন সিং শাস্ত্রী পিটিআইকে বলেন, ‘হাজার বছর আগে এই প্রথার সূচনা হয়েছিল পারিবারিক কৃষিজমি রক্ষা, যৌথ পরিবারের বন্ধন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। অনেক সময় সৎভাইয়েরাও এক কনে বিয়ে করতেন। এতে পারিবারিক ঐক্য ও অর্থনৈতিক স্থায়িত্ব বজায় থাকত।’

হাট্টি সম্প্রদায়ের এই অনন্য বিয়ের রীতি ‘জাজদা’ নামে পরিচিত। এতে কনে শোভাযাত্রাসহ বরপক্ষের গ্রামে আসে। বরের বাড়িতে ‘সীঞ্জ’ নামের এক আচার পালিত হয়, যেখানে স্থানীয় ভাষায় মন্ত্রোচ্চারণ করে পুরোহিত কনে ও বরদের গায়ে পবিত্র জল ছিটিয়ে দেন এবং শেষে গুড় মুখে দিয়ে আশীর্বাদ করেন যেন কুলদেবতা তাঁদের বৈবাহিক জীবনে মধুরতা আনেন।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন
themesba-lates1749691102